সুকান্ত ভট্টাচার্য

অদ্বৈধ

অদ্বৈধ – সুকান্ত ভট্টাচার্য নরম ঘুমের ঘোর ভাঙল?দেখ চেয়ে অরাজক রাজ্য;ধ্বংস সমুখে কাঁপে নিত্যএখনো বিপদ অগ্রাহ্য?পৃথিবী, এ পুরাতন পৃথিবীদেখ আজ অবশেষে নিঃস্বস্বপ্ন-অলস যত ছায়ারাএকে একে সকলি অদৃশ্য। রুক্ষ মরুর দুঃস্বপ্নহৃদয় আজকে শ্বাসরুদ্ধ,একলা গহন পথে চলতেজীবন সহসা বিক্ষুব্ধ। জীবন ললিত নয় আজকেঘুচেছে সকল নিরাপত্তা,বিফল স্রোতের পিছুটানকেশরণ করেছে ভীরু সত্তা। তবু আজ রক্তের নিদ্রা,তবু ভীরু স্বপ্নের সখ্য;সহসা চমক লাগে চিত্তেদুর্জয় …

অদ্বৈধ Read More »

মনিপুর

মনিপুর – সুকান্ত ভট্টাচার্য এ আকাশ, এ দিগন্ত, এই মাঠ, স্বপ্নের সবুজ ছোঁয়া মাটি,সহস্র বছর ধ’রে এসে আমি জানি পরিপাটি,জানি এ আমার দেশ অজস্র ঐতিহ্য দিয়ে ঘেরা,এখানে আমার রক্তে বেঁচে আছে পূর্বপুরুষেরা।যদিও দলিত দেশ, তবু মুক্তি কথা কয় কানে,যুগ যুগ আমরা যে বেঁচে থাকি পতনে উত্থানে!যে চাষী কেটেছে ধন, এ মাটিতে নিয়েছে কবর,এখনো আমার মধ্যে …

মনিপুর Read More »

দিকপ্রান্তে

দিকপ্রান্তে – সুকান্ত ভট্টাচার্য ভাঙন নেপথ্য পৃথিবীতে;অদৃশ্য কালের শত্রু প্রচ্ছন্ন জোয়ারে,অনেক বিপন্ন জীব ক্ষয়িষ্ণু খোঁয়াড়েউন্মুখ নিঃশেষে কেড়ে নিতে,দুর্গম বিষণ্ণ শেষ শীতে। বীভৎস প্রাণের কোষে কোষেনিঃশব্দে ধ্বংসের বীজ নির্দিষ্ট আয়ুতেপশেছে আঁদার রাত্রে- প্রত্যেক স্নায়ুতে;-গোপনে নক্ষত্র গেছে খসেআরক্তিম আদিম প্রদোষে।। দিনের নীলাভ শেষ আলোজানাল আসন্ন রাত্রি দুর্লক্ষ্য সংকেতে।অনেক কাস্তের শব্দ নিঃস্ব ধানেক্ষেতেসেই রাত্রে হাওয়ায় মিলাল;দিক্প্রান্তে সূর্য চমকাল।।

চিরদিনের

চিরদিনের – সুকান্ত ভট্টাচার্য এখানে বৃষ্টিমুখর লাজুক গাঁয়েএসে থেমে গেছে ব্যস্ত ঘড়ির কাঁটা,সবুজ মাঠেরা পথ দেয় পায়ে পায়েপথ নেই, তবু এখানে যে পথ হাঁটা। জোড়া দীঘি, তার পাড়েতে তালের সারিদূরে বাঁশঝাড়ে আত্মদানের সাড়া,পচা জল আর মশায় অহংকারীনীরব এখানে অমর কিষাণপাড়া। এ গ্রামের পাশে মজা নদী বারো মাসবর্ষায় আজ বিদ্রোহ বুঝি করে,গোয়ালে পাঠায় ইশারা সবুজ ঘাসএ গ্রাম নতুন …

চিরদিনের Read More »

বৈশম্পায়ন

বৈশম্পায়ন – সুকান্ত ভট্টাচার্য আকাশের খাপছাড়া ক্রন্দননাই আর আষাঢ়ের খেলনা।নিত্য যে পাণ্ডুর জড়তাসথীহারা পথিকের সঞ্চয়। রক্তের বুকভরা নিঃশ্বাস,আঁধারের বুকফাটা চীৎকার-এই নিয়ে মেতে আছি আমরাকাজ নেই হিসাবের খাতাতে। মিলাল দিনের কোনো ছায়াতেপিপাসায় আর কূল পাই না;হারানো স্মৃতির মৃদু গন্ধেপ্রাণ কভু হয় নাকো চঞ্চল। মাঝে মাঝে অনাহূত আহ্বানআনে কই আলেয়ার বিত্ত?শহরের জমকালো খবরেহাজিরা খাতাটা থাকে শূন্য। আনমনে জানা পথ চলতেপাই নাকো …

বৈশম্পায়ন Read More »

নিভৃত

নিভৃত – সুকান্ত ভট্টাচার্য বিষণ্ণ রাত, প্রসন্ন দিন আনোআজ মরণের অন্ধ অনিদ্রায়,সে অন্ধতায় সূর্যের আলো হানো,শ্বেত স্বপ্নের ঘোরে যে মৃতপ্রায়। নিভৃত-জীবন-পরিচর্যায় কাটেযে দিনের, আজ সেখানে প্রবল দ্বন্দ্ব।নিরন্ন প্রেম ফেরে নির্জন হাটে,অচল চরণ ললাটের নির্বন্ধ?জীবন মরণে প্রাণের গভীরে দোলাকাল রাতে ছিল নিশীথ কুসুমগন্ধী,আজ সূর্যের আলোয় পথকে ভোলামনে হয় ভীরু মনের দুরভিসন্ধি।।

কবে

কবে – সুকান্ত ভট্টাচার্য অনেক স্তব্ধ দিনের এপারে চকিত চুতুর্দিক,আজো বেঁচে আছি মৃত্যুতাড়িত আজো বেঁচে আছি ঠিক।দুলে ওঠে দিন; শপথমুখর কিষাণ শ্রমিকপাড়া,হাজারে হাজারে মাঠে বন্দরে আজকে দিয়েছে সাড়া।জ’লে আলো আজ, আমাদের হাড়ে জমা হয় বিদ্যুৎ,নিহত দিনের দীর্ঘ শাখায় ফোটে বসন্তদূত।মূঢ় ইতিহাস; চল্লিশ কোটি সৈন্যের সেনাপতি।সংহত দিন, রুখবে কে এই একত্রীভূত গতি?জানি আমাদের অনেক যুগের সঞ্চিত …

কবে Read More »

অলক্ষ্যে

অলক্ষ্যে – সুকান্ত ভট্টাচার্য আমার মৃত্যুর পর কেটে গেল বৎসর বৎসর;ক্ষয়িষ্ণু স্মৃতির ব্যর্থ প্রচেষ্টাও আজ অগভীর,এখন পৃথিবী নয় অতিক্রান্ত প্রায়ান্ধ স্থবির;নিভেছে প্রদূম্রজ্বালা, নিরঙ্কুশ সূর্য অনশ্বর ;স্তব্ধতা নেমেছে রাত্রে থেমেছে নির্ভীক তীক্ষ্ণস্বর-অথবা নিরন্ন দিন, পৃথিবীতে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা ;উদ্ধত বজ্রের ভয়ে নিঃশব্দে মৃত্যুর আনাগোনা,অনন্য মানবসত্তা ক্রমান্বয়ে স্বল্পপরিসর। গলিত স্মৃতির বাস্প সেদিনের পল্লব শাখায়বারম্বার প্রতারিত অস্ফুট কুয়াশা রচনায়;বিলুপ্ত বজ্রের …

অলক্ষ্যে Read More »

মহাত্মাজীর প্রতি

মহাত্মাজীর প্রতি – সুকান্ত ভট্টাচার্য চল্লিশ কোটি জনতার জানি আমিও যে একজন,হাঠাৎ ঘোষণা শুনেছি; আমার জীবনে শুভক্ষণএসেছে, তখনি মুছে গেছে ভীরু চিন্তার হিজিবিজি।রক্তে বেজেছে উৎসব, আজ হাত ধরো গান্ধীজী।এখানে আমরা লড়েছি, মরেছি, করেছি অঙ্গীকার,এ মৃতদেহের বাধা ঠেলে হব অজেয় রাজ্য পার।এসেছে বন্যা, এসেছে মৃত্যু, পরে যুদ্ধের ঝড়,মন্বন্তর রেখে গেছে তার পথে পথে স্বাক্ষর,প্রতি মুহূর্তে বুঝেছি …

মহাত্মাজীর প্রতি Read More »

পঁচিশে বৈশাখের উদ্দেশে

পঁচিশে বৈশাখের উদ্দেশে – সুকান্ত ভট্টাচার্য আমার প্রার্থনা শোনো পঁচিশে বৈশাখ,আর একবার তুমি জন্ম দাও রবীন্দ্রনাথের।হাতাশায় স্তব্ধ বাক্য; ভাষা চাই আমরা নির্বাক,পাঠাব মৈত্রীর বাণী সারা পৃথিবীকে জানি ফের।রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠে আমাদের ভাষা যাবে শোনাভেঙে যাবে রুদ্ধশ্বাস নিরুদ্যম সুদীর্ঘ মৌনতা,আমাদের দুঃখসুখে ব্যক্ত হবে প্রত্যেক রচনা।পীড়নের প্রতিবাদে উচ্চারিত হবে সব কথা। আমি দিব্যচক্ষে দেখি অনাগত সে রবীন্দ্রনাথ;দস্যুতায় দৃপ্তকণ্ঠ (বিগত …

পঁচিশে বৈশাখের উদ্দেশে Read More »

Verified by MonsterInsights