ছেঁড়া পাতা

কবিতার পাতায় হৃদয়ের শব্দ

শামসুর রাহমান

কোনো একজনের জন্যে

কোনো একজনের জন্যে -শামসুর রাহমান এতকাল ছিলাম একা আর ব্যথিত,আহত পশুর অনুভবে ছেঁড়াখোঁড়া।দুর্গন্ধ-ভরা গুহাহিত রাত নিস্ফল ক্রোধে দীর্ণ,শীর্ণ হাহাকার ছাড়া গান ছিল না মনে,জানি প্রাণে ছিল না সতেজ পাতার কানাকানিএমনকি মরম্নভূমির তীব্রতাও ছিল না ধমনীতে,স্বপ্ন ছিল না,ছিল না স্বপ্নের মতো হৃদয়। কে জানতো এই খেয়ালি পতঙ্গ, শীতের ভোর,হাওয়ায় হাওয়ায় মর্মরিত গাছ,ঘাসে-ঢাকা জমি, ছায়া-মাখা শালিকপ্রিয় গানের কলি […]

কোনো একজনের জন্যে Read More »

তুমি বলেছিলে

তুমি বলেছিলে -শামসুর রাহমান দাউ দাউ পুড়ে যাচ্ছে নতুন বাজার।পুড়ছে দোকান-পাট, কাঠ,লোহা-লক্কড়ের স্তূপ, মসজিদ এবং মন্দির।দাউ দাউ পুড়ে যাচ্ছে নতুন বাজার। বিষম পুড়ছে চতুর্দিকে ঘর-বাড়ি।পুড়ছে টিয়ের খাঁচা, রবীন্দ্র রচনাবলি, মিষ্টান্ন ভাণ্ডার,মানচিত্র, পুরনো দলিল।মৌচাকে আগুন দিলে যেমন সশব্দেসাধের আশ্রয় ত্যাগী হয়মৌমাছির ঝাঁক,তেমনি সবাইপালাচ্ছে শহর ছেড়ে দিগ্বিদিক। নবজাতককেবুকে নিয়ে উদ্ভ্রান্ত জননীবনপোড়া হরিণীর মত যাচ্ছে ছুটে।অদূরে গুলির শব্দ, রাস্তা

তুমি বলেছিলে Read More »

বাইবেলের কালো অক্ষরগুলো

বাইবেলের কালো অক্ষরগুলো -শামসুর রাহমান জো, তুমি আমাকে চিনবে না। আমি তোমারই মতোএকজন কালো মানুষ গলার সবচেয়েউঁচু পর্দায় গাইছি সেতুবন্ধের গান, যে গানেতোমার দিলখোলা সুরও লাগছে। জো, যখন ওরা তোমার চামড়ায় জ্বালা-ধরানোসপাং সপাং চাবুক মারে আরহো হো করে হেসে ওঠে,যখন ওরা বুটজুতোমোড়া পায়ে মারে তোমাকে,তখন ধূলায় মুখ থুবড়ে পড়ে মানবতা।জো, যখন ওরা তোমাকেহাত পা বেঁধে নির্জন

বাইবেলের কালো অক্ষরগুলো Read More »

কখনো আমার মাকে

কখনো আমার মাকে -শামসুর রাহমান কখনো আমার মাকে কোনো গান গাইতে শুনিনি।সেই কবে শিশু রাতে ঘুম পাড়ানিয়া গান গেয়েআমাকে কখনো ঘুম পাড়াতেন কি না আজ মনেই পড়ে না। যখন শরীরে তার বসন্তের সম্ভার আসেনি,যখন ছিলেন তিনি ঝড়ে আম-কুড়িয়ে বেড়ানোবয়সের কাছাকাছি হয়তো তখনো কোনো গানলতিয়ে ওঠেনি মীড়ে মীড়ে দুপুরে সন্ধ্যায়,পাছে গুরুজনদের কানে যায়। এবং স্বামীর সংসারে এসেও মা

কখনো আমার মাকে Read More »

তিনি এসেছেন ফিরে

তিনি এসেছেন ফিরে -শামসুর রাহমান লতাগুল্ম, বাঁশঝাড়, বাবুই পাখির বাসা আরমধুমতি নদীটির বুক থেকে বেদনাবিহ্বলধ্বনি উঠে মেঘমালা ছুঁয়েব্যাপক ছড়িয়ে পড়ে সারা বাংলায়। এখন তো তিনি নেই, তবু সেই ধ্বনি আজ শুধুতাঁরই কথা বলে;মেঘনা নদীর মাঝি যখন নদীতেভাটিয়ালী সুর তোলে, তারপালে লাগে দীর্ঘদেহী সেই পুরুষের দীর্ঘশ্বাস,যখন কৃষক কাস্তে হাতেফসলের যৌবনের উদ্ভিন্ন উল্লাস দেখে মাতে,তখন মহান সেই পুরুষের

তিনি এসেছেন ফিরে Read More »

বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা

বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা -শামসুর রাহমান নক্ষত্রপুঞ্জের মতো জলজ্বলে পতাকা উড়িয়ে আছো আমার সত্তায়।মমতা নামের প্রুত প্রদেশের শ্যামলিমা তোমাকে নিবিড়ঘিরে রয় সর্বদাই। কালো রাত পোহানোর পরের প্রহরেশিউলিশৈশবে ‘পাখী সব করে রব’ ব’লে মদনমোহনতর্কালঙ্কার কী ধীরোদাত্ত স্বরে প্রত্যহ দিতেন ডাক। তুমি আর আমি,অবিচ্ছিন্ন পরস্পর মমতায় লীন,ঘুরেছি কাননে তাঁ নেচে নেচে, যেখানে কুসুম-কলি সবইফোটে, জোটে অলি ঋতুর

বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা Read More »

একটি কবিতার জন্য

একটি কবিতার জন্য -শামসুর রাহমান বৃক্ষের নিকটে গিয়ে বলি ;দয়াবান বৃক্ষ তুমি একটি কবিতা দিতে পারো ?বৃক্ষ বলে আমার বাকল ফুঁড়ে আমার মজ্জায়যদি মিশে যেতে পারো, তবেহয়তো বা পেয়ে যাবে একটি কবিতা ! জীর্ণ দেয়ালের কানে বলি ;দেয়াল আমাকে তুমি একটি কবিতা দিতে পারো ?পুরোনো দেয়াল বলে শ্যাওলা-ঢাকা স্বরে,এই ইঁট সুরকির ভেতর যদি নিজেকে গুঁড়িয়ে দাও,

একটি কবিতার জন্য Read More »

তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা

তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা -শামসুর রাহমান তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা,তোমাকে পাওয়ার জন্যেআর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায় ?আর কতবার দেখতে হবে খাণ্ডবদাহন ? তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,সাকিনা বিবির কপাল ভাঙলো,সিঁথির সিঁদুর গেল হরিদাসীর।তুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,শহরের বুকে জলপাইয়ের রঙের ট্যাঙ্ক এলোদানবের মত চিৎকার করতে করতেতুমি আসবে ব’লে, হে স্বাধীনতা,ছাত্রাবাস বস্তি উজাড হলো। রিকয়েললেস

তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা Read More »

রাজকাহিনী

রাজকাহিনী -শামসুর রাহমান ধন্য রাজা ধন্য,দেশজোড়া তার সৈন্য! পথে-ঘাটে-ভেড়ার পাল।চাষীর গরু, মাঝির হাল,ঘটি-বাটি, গামছা, হাঁড়ি,সাত-মহলা আছে বাড়ি,আছে হাতি, আছে ঘোড়া।কেবল পোড়া মুখে পোরারদুমুঠো নেই অন্ন,ধন্য রাজা ধন্য। ঢ্যাম কুড় কুড় বাজনা বাজে,পথে-ঘাটে সান্ত্রী সাজে।শোনো সবাই হুকুমনামা,ধরতে হবে রাজার ধামা।বাঁ দিকে ভাই চলতে মানা,সাজতে হবে বোবা-কানা।মস্ত রাজা হেলে দুলেযখন-তথন চড়ান শূলেমুখটি খোলার জন্য।ধন্য রাজা ধন্য।

রাজকাহিনী Read More »

আমার মৃত্যুর পরেও যদি

আমার মৃত্যুর পরেও যদি -শামসুর রাহমান একটি পাখী রোজ আমার জানালায়আস্তে এসে বসে, তাকায় আশেপাশে।কখনো দেয় শিস, বাড়ায় গলা তার;আবার কখনোবা পাখাটা ঝাপটায়। পালকে তার আঁকা কিসের ছবি যেন,দু’চোখে আছে জমা মেঘের স্মৃতি কিছু;নদীর স্বপ্নের জলজ কণাগুলিএখনো তাঁর ঠোটে হয়তো গচ্ছিত। কাউকে নীড়ে তার এসেছে ফেলে বুঝি?হয়তো সেই নীড়, আকাশই আস্তানা।তাই তো চোখ তার এমন গাঢ় নীল,মেললে

আমার মৃত্যুর পরেও যদি Read More »

Verified by MonsterInsights